শিশির সাঁতরা

                                                                                                                                                                                                                 ছবি - উৎপলকুমার ধারা

 হাস্যরসিক ছড়া শিল্পী                 ভবানীপ্রসাদ









শিশির সাঁতরা









 

ভবানীর কথা ভাবতে বসলে স্মৃতির ঢেউয়ের পরে ঢেউ উঠতে থাকে, সব গুনে উঠতে পারি না

মনে পড়ছে, বেশ অনেক দিন আগেকার কথা। সালটা ঠিক মনে পড়ছে না। রত্নাকর বাগচীর ডাকে কলকাতা থেকে বেশ কিছু সাহিত্যিক চলেছি নিউ জলপাইগুড়ি। ট্রেনের অপেক্ষায় প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে গল্পগাছা চলছে। আমার সঙ্গে ছিলঅভিনব অগ্রণীপত্রিকার সম্পাদক দিলীপকুমার বাগ। সেই সময় আমি দিলীপের অনুরোধে ওর পত্রিকায় ছড়া-কবিতার পাতা দেখি। ভবানীপ্রসাদ প্রতি সংখ্যার জন্য সবুজ কালিতে দুটো করে ছড়া পাঠাত মনোনয়নের জন্য। অবাক হয়ে দেখতাম ওর ছড়ার ছন্দ, মিল, মাত্রা কী আশ্চর্যরকমের উঁচু মানের! সম্পাদককে বলতাম, ‘এর কোনও লেখাই তো বাদ দেওয়া যায় না।সে-কথা নিয়েই আলোচনা করছিলাম আমি আর দিলীপ। এমন সময় দিলীপের বড়ো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে আমাকে বলল, “কাকু, কাকু, ভবানীপ্রসাদ মজুমদার তোমার সঙ্গে কথা বলতে চান।

কোথায় সে?”

এগিয়ে এল ভবানী। এসে আপনি আজ্ঞে করে সম্বোধন করতে লাগল। আমি হেসে বললাম, “ওসব আপনি আজ্ঞে ছাড়ো।

ভবানী বলল, “আপনি বয়সে বড়ো…

বললাম, “আরে ভাই, তোমার ছড়া এত মিষ্টিমধুর, যে-কেউ পড়লেই তার মুখে হাসি ফুটে উঠবে। এত সুন্দর ছড়া যে লেখে, সে আমাকে আপনি আজ্ঞে না বললেও চলবে। চালিয়ে যাও ভাই। দেখবে, একদিন তুমি সকলকে পিছনে ফেলে দেবে।

বয়সে আমার থেকে অনেকটা ছোটো হলেও ছড়ার দিক দিয়ে ও অনেক বড়ো রসিক ছড়াকার। নিজের নামে ছাড়াও একাধিক ছদ্মনামে ছড়া লেখে ভবানী নানান পত্রিকায়। তারই একটা নাম হচ্ছেভবানন্দ ভারতীওর এই ছদ্মনাম নিয়ে একসময় একটা ছড়া লিখেছিলাম।—

তুমি সেই ভবানন্দ না?

লিখতে ছড়া ছদ্মনামে,

আট থেকে আশি হাসত সব

ছড়া পড়েই শহর গ্রামে

    ভবানীকে নিয়ে লিখতে বসলে শত শত স্মৃতি জট পাকিয়ে যায়। অনেক কিছুই লিখতে মন চায়। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছি, একসঙ্গে বেশিক্ষণ লিখতে পারি না। আশিতে পা রেখেও আশায় আছি, একদিন ওকে নিয়ে অনেক কিছু লিখব। 

  

<